হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মানুষের হৃদয় সর্বদা প্রশান্তি খোঁজে। কেউ সে প্রশান্তি খোঁজে ধন-সম্পদে, কেউ খ্যাতিতে, আবার কেউ সম্পর্ক ও ভোগ-বিলাসে। কিন্তু এসবের কোনোটি স্থায়ী আনন্দ দিতে পারে না। কারণ জাগতিক সুখ ক্ষণস্থায়ী, আর ক্ষণস্থায়ী আনন্দ কখনো স্থায়ী শান্তি এনে দিতে পারে না। এই সত্যটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন ইমাম হাসান আসকারি (আ.) তাঁর গভীর অর্থবহ বাণীতে-“যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্যে আনন্দ খুঁজে পায়, সে মানুষের সান্নিধ্যে বিমুখ হয়ে যায়।”
(নুজহাতুন নাযির ও তানবিহুল খাদির, পৃষ্ঠা ১৪৬, হাদিস ১১)
আল্লাহর সান্নিধ্যের আনন্দ
আল্লাহর সান্নিধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া মানে হলো আত্মাকে তাঁর স্মরণে প্রশান্ত করা, তাঁর মহব্বতে নিমগ্ন হওয়া এবং তাঁর ইবাদতে অন্তরের সুখ অনুভব করা। যখন একজন মানুষ নামাজে দাঁড়িয়ে আন্তরিকভাবে কুরআন তিলাওয়াত করে, অথবা নিঃশব্দে তাঁর রহমতের কথা চিন্তা করে, তখন সে এমন এক প্রশান্তি লাভ করে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
মানুষের সান্নিধ্য থেকে বিমুখতা
ইমাম (আ.)-এর কথার অর্থ এই নয় যে মানুষ থেকে দূরে সরে যেতে হবে বা সামাজিক দায়িত্ব থেকে বিমুখ হতে হবে। বরং এর মর্ম হলো-যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্যে প্রকৃত সুখ খুঁজে পায়, তার কাছে জাগতিক মিলনমেলা বা আড়ম্বরপূর্ণ সম্পর্ক তুচ্ছ হয়ে যায়। সে মানুষের প্রশংসা, স্বীকৃতি কিংবা বাহ্যিক আনন্দে আর আসক্ত থাকে না।
এ হাদিস থেকে আমাদের শিক্ষা
১. আত্মিক উন্নতির পথ: প্রকৃত আনন্দ ধন-সম্পদ, খ্যাতি বা মানুষের প্রশংসায় নয়, বরং আল্লাহর স্মরণে নিহিত।
২. জীবনের অগ্রাধিকার: যে হৃদয় আল্লাহর প্রেমে মুগ্ধ, তার কাছে জাগতিক আসক্তি মূল্যহীন হয়ে যায়।
৩. সামাজিক ভারসাম্য: আল্লাহর নৈকট্য অর্জন মানে দায়িত্ব থেকে পালানো নয়, বরং দায়িত্ব আরও আন্তরিকভাবে পালন করা। তবে মানুষের খুশি করার জন্য জীবন ব্যয় না করে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
মানুষের সান্নিধ্য আমাদের জীবনে প্রয়োজনীয় হলেও এর সীমা আছে। জাগতিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব বা সমাজের প্রশংসা ক্ষণিক আনন্দ দেয়, কিন্তু আল্লাহর সান্নিধ্য আনে স্থায়ী প্রশান্তি ও আত্মিক পরিতৃপ্তি। ইমাম হাসান আসকারি (আ.)-এর এই বাণী আমাদের শেখায়-সত্যিকারের আনন্দ ও শান্তির উৎস একমাত্র আল্লাহর নৈকট্যে, আর যিনি সেই আনন্দ লাভ করেন, তাঁর কাছে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল হয়ে যায় তুচ্ছ।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট